Article Image

বিষাক্ত মানব


শিহাব উদ্দীন শিল্প ও সাহিত্য বিভাগ।
১৩ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে প্রকাশিত।
57 Views.   2 Comments.   206 Points.


ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কোন এক সালে দক্ষিণবঙ্গের কোন এক অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জন্ম নেন তিনি। কত সালে সেটা জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাইনি কখনও। তাকে তিনি বলছি কারণ বয়সে বড়দের সম্মান দিতে হয়, শ্রদ্ধা থেকে তিনি বলছি তা ভেবে ভুল করা যাবে না। সেই অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের অপরিচ্ছন্নতা তাকে কোনদিন ছেড়ে যেতে পারেনি। ইংরেজ আমল শেষ তবুও তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল। ছেলে বেলায় তার মা তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন, যখন বড় হয়েছেন তখন তার বাবা তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। না না শখ করে নই। স্কুল পালানো আর নালিশ ঠেকাতেই পিতা মাতার পায়ের জুতা ক্ষয় হতে হতে ২ ঈদ বাদেও মাঝে ২ জোড়া কেনা লাগে। কি আজব তাই না? 

শিক্ষককে সম্মান দেখাতে কম বরং পড়া না পারার কারণে দাড়িয়ে কেটেছে বাল্য বয়সে ক্লাসের বেশিরভাগ সময়। তার সব থেকে বড় গুণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল, কারণ প্রাথমিক বা মাধ্যমিকে অজস্রবার অকৃতকার্য্য হয়েও তিনি কখনও পড়ালেখা ছাড়েন নি! একদিকে তার বন্ধু জনেরা যেখানে মাঠে কাজ করত, গরুর গাড়ি চালাত, তিনি তখনও পড়া লেখা চালিয়ে গিয়েছেন নির্লজ্জের মতন। ইজ্জত ঠেকাতে মামা বুদ্ধি করে তাকে শহরে পাঠিয়ে দেন যাতে যাই হোক না কেন এদিকে কেউ জানতেও না পারে।

মেধার জোর না থাকায় বাপের টাকার জোরে বড় কলেজে একটা জোগাড় হয়ে গেল ঠিকই। যার কেউ নাই তার বড়লোক বাপ আছে! গরু ছাগলের চামড়ার দাম সেদিনই কমেছে যেদিন তার চামড়ার পুরুত্ব সকল রেকর্ড ভেঙেছে, কোন মতে তিনি টেনে টুনে পাস করে বের হয়েই লাট সাহেব সাজ নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলেন, ভাবে সাবে যেন পা মাটিতে পড়ে না। বাবা মা দেখে তো অবাক। ছেলের তো বেজায় পরিবর্তন। যেন মেশিনের এক সাইডে ধান দিয়ে অন্য দিক থেকে খোলশ ঝেড়ে চাল বের হয়ে এসেছে। গ্রাম থেকে ছেলেকে নিয়ে চলে এলেন শহরে। যব থব করে ছেলেকে একটা দোকান নিয়ে নাম দিলেন অফিস। বেচা বিক্রি কিছু হোক না হোক ছেলে এখন বড় লাট!

শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া সাইকেল টা শহরে ক্ষুধার্থ মানুষের সেবায় ভাত পৌছে দেবার কাজে লেগে গেল! ৩০ আনা করে মজুরিতে বেশ চলছিল দিন কাল। আশ পাশে বেশ শুনাম ছড়িয়ে পড়ল। বাবা মাও খুশি অন্তত একটা কাজে তো সে ব্যস্ত! তবে দিন তো আর এক রকম যায় না। সুখ সইল না এবারও। শিক্ষিত সচেতন নারী বাদীরা ঠিকই ধরে ফেলল তার আসল রূপ! বিদ্রোহ করে বসল একদিন। পূর্বের জীবনের তার সব জারি জুরি আর এই ৩০ আনার ধান্দা যে কোন সেবা নয় বরং নিজের আখের গোছানোর জন্যই তা সবই ফাশ করতে উঠে পড়ে লাগলেন সকলে মিলে। শহরে নতুন গল্পটা সবারই বেশ নজর কাড়ল সহজেই। অন্ধ ভক্ত, পাইক, পেয়াদা, চাপরাশি আর চামচারা তো বেজাই খুশি। স্বাধীনতার পর এত বড় স্বাধীনতা যেন গগনচুম্বি অর্জন। নারী জাগরণের অগ্রদূতরা নিজেরাই নিজেদের প্রধান করে করলেন নারী সংঘ। যে সংঘে কেউ ছোট বড় নয়। সবাই সভার সভাপতি। কি দারুণ ভারসাম্য! নায়ক রাতারাতি হয়ে গেলেন গল্পের মূল ভিলেন। সত্য কতদিন ই বা আর ঢাকা থাকে!

আপনি হয়তো শুনলে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু হিতে বিপরীত ঘটল তখন যখন কোন এক আজানা রহস্যে এত নিকৃষ্ট একটা লোকের পক্ষ নিল হাজার হাজার ক্ষুধার্থ মানুষ। ইংরেজ আমল শেষে উত্তরবঙ্গ থেকে পালিয়ে আসা কিছু মাথা খারাপ নারীরাও পক্ষ নিল তার, সাথে ছিল সেই নারীদের আপনজনেরাও! সচেতন নারী বাদীদের রাতের ঘুম হারাম করে সচেতন করার সব চেষ্টা যেন ব্যর্থ হতেই লাগল। অবশেষে কিনা পাগল ছাগলের কাছে হার মানতেই হবে! কিন্তু কি আর করা? ভাল চাইতে গিয়ে সইল না যেন। পাগল গুলো কি আর ধর্মের বাণী শোনে? 

ঘটনা মাতব্বর সাহেবের কান পর্যন্ত পৌছাতে আর বাকি রইল না। নালিশ তার নিকটেও পৌছেছে। নারী ঘটিত বিষয়ে কালেক্টরিতে বড় বাবুর কাছে না গিয়ে তিনি নিজেই সমাধান করবেন ভাবলেন। বড় খবরের কাগজের আমাকে ডাকলেন তদন্ত করতে। আমি আবার বেশ সৌখিন লেখক। বঙ্গদেশের বৃহৎ এক খবরের কাগজে টুকটাক তখন আমার লেখা ছাপা হয়। ২ দিন হল এক মহৎ পুরুষকে নিয়ে ৬ পাতা খসড়া লিখেছি। দূর থেকে তার কথা শুনে বেশ আবেগী ছিলাম। তার সাথে স্বয়ং দেখা করেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। সত্যিই সাহেবের মহত্বের যেন জুড়ি নেই। স্বাধীনতার পর পথ শিশুদের নিয়ে একটা পাঠশালা গড়েছিলাম। সেখানেও কিছু দান করবেন সেটাও জানিয়েছেন। নিজেকে এতদিন বেশ বড় মাপের সমাজ সেবক ভাবতাম কিন্তু তার সাথে দেখা করে মনে হল তিনি অনেক বড় না হলেও আমার থেকে ঢের বেশি বড় মাপের মানুষ!

মাতব্বর সাহেব আমাকে তার কাছারিতে দেখেই বেশ বড় একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। হুক্কা আমার সহ্য হয় না তাই টানি না। মাতব্বর সাহেব বড় মানুষ তাই নাকে ধোয়া আসলেও নিষেধ করার সাহস পাচ্ছিলাম না। প্রতিবাদ না করে করে আমার মত ভদ্র লোকেদেরও বেশ চামড়া পুরু হয়েছে বলতে দ্বিধা নেই। উপরের পুরোটা অংশ তার দেয়া কাগজে বিরাট ধৈর্য্য সহকারে পড়ে বেশ মনটা খারাপই লাগল। এক মহৎ পুরুষকে নিয়ে লেখার মাঝে আর এক হুবহু বিপরীত পুরুষকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে মাথাটা ঘুরে উঠল। কেমন যেন গা গোলানো একটা চরিত্র মাতব্বর সাহেব এর কাগজের এই ভীলেন লোকটা।

পৃথিবী বড়ই আজব। ভাল মন্দ মিলেই জগৎ। আমি নাস্তিক মানুষ তারপরও প্রতিটি ঘটনার সাথে মেলবন্ধন ঠিকই ধরতে পারি। নাস্তিক হবার বেশ সুবিধা। ২ পক্ষেই আমি সমান তাল মিলাতে পারি। নেহাৎ বাধ্য হয়েই ঘটনা যাচাই করতে রওনা দিলাম সেই সংঘের এক সভাপতির উদ্দেশ্যে। দেখাও হয়ে গেল। আমাকে পেয়ে তো সে বেজায় খুশি। আপন ভাইয়ের মতই আপ্যায়ণ করলেন। বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি কথা বলেন মহিলা। তার বাচন ভঙ্গি ও সাজগোজ বেশ নাড়া দিল আমাকে। মনে হল তিনি যেন মিথ্যা বলতেই জানেন না। সন্ধ্যা হতেই কথা শেষ করে বিদায় নিয়ে ফিরে এলাম। তিনি অনুরোধ করলেন তাদের অভিযোগটা যেন কাগজে হুবহু ছাপানো হয়। সাথে এই স্বাধীনতার নারী জাগরণের অগ্রদূত কয়েকজনের নাম ও লিখে দিলেন চিরকুটে। নাম গুলোর বানান বার বার করে দেখে নিলেন ঠিক লিখেছি কিনা। কাগজে ছাপা হবে সব নাম গুলো ঠিক ঠাক হওয়া তো চাইই চাই!

বাড়ি ফিরে আর দেরি করলাম না। কাগজে একবারে ২ টা লেখাই পাঠাব একসাথে ভাবলাম। মহিলাকে খুশি করতে গল্পে কোন পরিবর্তন করলাম না, শুধু একটু পরিমার্জন করেছি পড়ার সুবিধার্থে। অনেক ভেবে এই বাজে মানবকে নিয়ে লেখা গল্পের নাম দিলাম বিষাক্ত মানব। পোস্ট অফিসে নিজে গিয়ে ২ টি লেখাই জমা দিলাম। সামনে আমার জন্মদিন। একসাথে ২ টা লেখাই যাতে একদিনে ছাপায় তার জন্য এডিটরকেও একটু জন্মদিনে বাড়িতে আসার দাওয়াত করলাম। কচি পাঠার মাংস তার ভারি পছন্দ। এক বেলাই তো খাবে কতই বা খরচ!

কাল আমার জন্মদিন তাই বেশি রাত করলাম না। খবরের কাগজ পৌছাতে দুপুর হবে হয়তো। আমার লেখা ২ টা ছাপা হবার কথা আবার সদাই করতে হবে অতিথিরা আসবেন। তরু সকাল সকাল না হাট থেকে ফিরলে বাড়ি মাথায় করবে কোন সন্দেহ নেই। ভোর হতে না হতেই তরু এসে ডেকে দিয়ে গেল। বিয়ের পর থেকে সেই আমার সব। কদিন হয় ওকে মোটেই সময় দিতে পারছি না। ও শিক্ষিত মেয়ে। হাতের কাজ জানে। কার সাথে যেন দেখা করতে নিয়ে যাবে তার হাতের কাজ শহরে বিক্রির বিষয়ে। কিছু উপরি টাকাও সংসারে আসবে এমন কি যেন একটা বিষয়ে। ওকে বলেছিলাম জন্মদিনে ছুটি নিয়ে ওকে নিয়ে যাব সেখানে। কিন্তু আজ তা আর হবে না। পরে একদিন যাব ক্ষণ। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এসব ভাবতে ভাবতে চৌকাঠের পাশ দিয়ে খেয়াল করে দেখি বেলা বেশ গড়িয়েছে। ঝাপ দিয়ে খাট থেকে নেমে হাটে রওনা হলাম। হাট থেকে ফিরে ব্যাগ টা ধরিয়ে দিতেই হাসি ফুটল তরুর মুখে। তার রান্নার হাতের কোন জুড়ি নেই। নিজের বউ বলে বলছি না যেই তার রান্নাটা খেয়েছে সেই প্রশংসা না করে যায়নি।

বেলা বেশ গড়াল। খবরের কাগজটা এখনও এল না। এদিকে প্রতিটি মুহূর্ত যেন দীর্ঘ লাগছে। তরু একবার এসে জানিয়ে গিয়েছে রান্না প্রায় শেষের পথে। আমিও স্নান সেরে নিলাম। গরমে পুকুরটার পানি শুকিয়ে আর রুচি হয়না ডুব দেই। গা মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরছি পথেই যেন আকাশ থেকে পড়লাম! আমার গল্পের সেই মহৎ মানুষটি সাথে কাগজের এডিটর ২ জনই একসাথে হেটে আসছেন! আমি তো জার পরনাই খুশি। খুশি যেন আমার চোখ মুখ দিয়ে ঝরছে! সরাসরি তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। জন্মদিনে এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে আমাকে হয়তো অবাক করে দিতেই তিনি এসেছেন। এডিটর সাহেবের সাথেও করমর্দন করলাম। তার মুখটা কেন যেন বেজার। জানি বউ এর সাথে তার ঘন ঘন ঝামেলা হয় আজও হয়তো তার ব্যতীক্রম নয়! ২ জনকে টেনে বাড়িতে ঢুকিয়ে কাছারি ঘরে বসতে দিলাম। তিনি তার হাসিমাখা মুখে আমার হাতে আজকের খবরের কাগজটা তুলে দিলেন। হাতে তুলে দিলেন একটি খাম। বুঝলাম খামে কিছু পয়সা আছে আমার সেই পথশিশুদের পাঠশালায় দেবেন বলেছিলেন। এটাও বুঝলাম তার লেখাটা ছাপা হয়েছে বলেই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নিজেই সহায়তাটা পৌছে দিতে এসেছেন। তারপরও ভদ্রতার খাতিরে প্রশ্ন করেই বসলাম,আজ কি আপনাকে নিয়ে লেখাটা ছাপা হয়েছে? তিনি হাসিমুখে হ্যা সূচক মাথা নাড়লেন। এরপর আবার বেবোধ এর মত প্রশ্ন করে বসলাম, লেখাটা কি আপনার পছন্দ হয়েছে? আমি কি সব সত্য গুলোকে ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি? তিনি এবারো হাসিমুখে হ্যা সূচক মাথা নেড়ে জানালেন হ্যাঁ। যাক এতক্ষণে আমার মুক্তি। এডিটর কি ভাবল সেটা বড় কথা নয়। আমার মনে যাকে মহান এর স্থান দিয়েছি সে খুশি হলেই আমি স্বার্থক।

খেতে বসে গেলাম। খাবার ফাকে ফাকে আমার লেখার অনেক প্রশংসা করলেন। এডিটর সাহেব সেই তখন থেকেই চুপ। সাহস করে একবার জিজ্ঞেস করেই বসলাম। বললেন আজ আমার ১ টা লেখা ছাপা হয়েছে। সাহিত্য কলামে জায়গার সংকুলান হয়নি বলে। এ নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। আজ হয়নি কাল আর একটা ছাপা হবে, যদিও ২ টা একদিনে হলে ভালই হত।

আপাতত অতিথিদের নিয়ে রসনা বিলাশে মশগুল হলাম। এক বোল মাংস শেষ হতেই আর এক বোল আনতে অন্দরে গেলাম, তরু কিছুটা দিয়ে বলল কয়েক টুকরো সে জ্বালিয়ে ছিঁকেই তুলে রেখেছে কাল সেই তার সাথে দেখা করতে যাবে আমাকে নিয়ে খালি হাতে গেলে কেমন দেখায়! আমার অম্বলের সমস্যা আছে। তাই চর্বি জাতীয় খাবার যেন একটু অল্প খাই সেটাও সতর্ক করে দিল। না হলে আবার শরীর খারাপ করবে! আমি হাশি মুখে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বোল টা নিয়ে চলে এলাম। অতিথিদের ততক্ষণে উদরপূর্তি প্রায় শেষের দিকে।

অগত্যা যতটুকু আনলাম সেটাও পাত্রে থেকে গেল। পেট পূজার পর্ব চুকিয়ে পানের ডালা নিয়ে বসলাম। অতিথি আপ্যায়নে কোন কমতি রাখা চলবে না। তরু ততক্ষণে হেঁসেল থেকে অতিথিদের এক নজর দেখে ফেলেছে। কারো কোন কমতি হচ্ছে কিনা। হঠাত ডাক পড়ল আচমকা! অগত্যা ভেতরে না গিয়ে পারলাম না! তরুর চোখ মুখ ততক্ষণে জ্বল জ্বল করছে। আমাকে পেয়ে সে কি খুশি। অনেক কষ্টে বলল, এই তো সেই যার সাথে কাল দেখা করতে যাবার কথা! তরুর বাবার বাড়ির এলাকায় কোন এক অনুষ্ঠানে নাকি সে বক্তব্য রেখেছিল তখন থেকেই তরু তাকে দূর থেকে চেনে! 

যাই হোক সব শুনে আমিও বেশ অবাক হলাম। এবার বুঝি তরুর স্বপ্নটাও পূরণ হবে কোন সন্দেহ নেই। সবকিছু কত সুন্দর মিলে গেল। খাওয়ানোর পর আবার বউয়ের কথাটা বলব কেমন যেন নিজেকে স্বার্থপর লাগছিল। তবে মহৎ মানুষের মহত্বের তো কোন শেষ নেই। আশা ছাড়লাম না। ফিরে গিয়ে বউয়ের কথাটা পাড়লাম তার সামনে। বরাবরের মতই তিনি আবারো হাশি মুখে বিষয়টা সুরাহা করে দিলেন। ফিরে গিয়ে সকল ব্যবস্থা নিবেন কথা দিলেন। 

অবশেষে বিদায়ের পালা এল। এডিটর সাহেব সেই দুপুরের শুরু থেকে এই শেষ পর্তাযন্ত, তার মুখ যেন বৈশাখীর কালো মেঘ। যাই হোক ফেরার বেলায় এডিটর সাহেব অন্তত একটা ধন্যবাদ ও দিলেন না বিদায় ও জানালেন না। মহৎ মানুষটি হাসিমুখে এসেছিলেন হাসিমুখেই তিনি বিদায় নিলেন। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরে ঘরে ফিরে তরুকে পেলাম। আমি কিভাবে তাকে চিনি বা কিভাবে পরিচয় সেটাই এবার তরু জানতে চাইল। তরুকে সব খুলে বললাম আর আজ তাকে নিয়ে লেখাটা ছাপা হয়েছে সেটাও বললাম। সেই লেখাটা ছাপার কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি নিজেই এসেছিলেন এবং পাঠশালার জন্য অনুদান ও দিয়েছেন সবটাই জানালাম। সব জেনে তরুর আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। খবরের কাগজটা নিয়ে কই কই দেখি দেখি বলে লেখাটা কেমন লিখেছ বলে পাতা উল্টাতে লাগল। 

ক্লান্তিতে আমার চোখটা লেগে এসেছিল। তরু পুরো সব গুলো পাতা খুঁজেও না পেয়ে বিরক্তি নিয়ে আমার হাতে ছুড়ে দিল। - কই তোমার লেখা কোন পাতায় ছাপিয়েছে? আমি চোখ মেলতে মেলতে ৩ পাতা ওল্টালাম। সারা শরীরে বিদ্যুত খেলে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হেলান দেয়া থেকে সোজা বসে পড়লাম চৌকিতে। হার্ট বিট করা যেন থেমে গেছে। গলাটা শুকিয়ে ১ সেকেন্ড ঢোক গিলতে কষ্ট হল। পাকা তালের মত সজোরে মাটিতে আছড়ে পড়েছি যেন! তরু আমার এই আচমকা অবস্থা ভালমত বুঝতে পেরেছে। তরু পিঠে হাত রেখে হেলে পড়ে আমার মতই সমান আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করল- কি ব্যাপার গো? কি হল হঠাত? শরীর অসুস্থ লাগছে? আমি বলেছিলাম তোমাকে মাংসটা একটু কম খাও? হল তো এবার? আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিভাবে বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কয়েক মুহূর্ত! মনে হল আমার পৃথিবীটা যেন থেমে গেছে। আমার এই পাগলের মত অস্বাভাবিক হাব ভাব দেখে তরু ছটফট শুরু করে দিল। -ওগো তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? পানি দেব? বলতে বলতেই পাশের পাত্র থেকে পুরোটা পানি মাথায় ঢেলে দিল। আমার মাথা থেকে বুক বেয়ে পানি খবরের কাগজের পাতা ভিজে পানির ঝাপটায় ২ টুকরো হয়ে ২ হাতে ২ ভাগ চলে গেল। হাত থেকে টান দিয়ে কাগজ সরিয়ে আমাকে তরু শুইয়ে দিল। আরো কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়েই রইলাম। ততক্ষণে আমার হুশ ফিরেছে।

আমি প্রথমে ওকে শান্ত করলাম। ওকে বললাম আমি সুস্থ আছি। ও কোন কথা না বাড়িয়ে বলল শুয়ে পড়তে। আমি চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম কিন্তু অন্তর্জালা কতটা ভয়াবহ হতে পারে নিজের আত্মার কাছে জবাবদিহীতা কতটা কঠিন হতে পারে আমি তখন জীবনে প্রথমবার উপলব্ধি করতে পেরেছি। কোন মুখ নিয়ে আমি ওকে বলব কথাটা! আমার নাস্তিক মন বার বার আমাকে বলতে থাকল এত বড় পাপ আমি কিভাবে করলাম! 

কিভাবে আমি তরুকে বলব আমার কি হয়েছে?  কিভাবে বলব ওই মহৎ মানুষের নামটা নেবার যোগ্যতাও আমি আজ হারিয়েছি? 

কিভাবে বলব আজ প্রকাশিত হয়েছে, -   বিষাক্ত মানব! 


Direct Share Link :


Edit পূর্বের

লিখেছেন, শিহাব উদ্দীন

Writer & Web Portal Admin.
Pulished 47 Posts.
Total 19.1K Views.


Jesmin Afroje

সাহিত্যের প্রসারতা এতটাই যে প্রতিনিয়ত এর আকাঙখা বেড়েই যায়, শেষ হয়েও হইলো না শেষ এমন।
206 Orders.   19 Apr, 2025 02:17 PM.


আলহামদুলিল্লাহ আপু। বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী হওয়ায় আপনাকেই প্রথম পড়তে দেয়া হয়েছিল। ধন্যবাদ আপু আপনাকে। ❤️
Admin   19 Apr, 2025 04:06 PM